শুয়োপোকা, প্রজাপতি এবং আমিগুলো

পাঁচ.

“রুদ্র, আমার প্রচণ্ড মন খারাপ, অনেক অনেক মন খারাপ। আমাকে একটু আদর করবি?”
একদিন গভীর রাতে আমার ঘুম ভাঙলো মোবাইলের রিঙটোন শুনে। ডিসপ্লেতে এলইউ লেখাটা দেখে রিসিভ করে কানে লাগাতেই ওর কথা আবেগ জড়ানো কথাগুলো ভেসে এলো।
প্রথমেই আমি বুঝতেই পারলাম না। বুঝতেই পারলাম না ও আমাকে কী বলেছে?
চোখের আর মনের ঘুম দ্রুত কেটে গেলো সামান্য দুটি বাক্য শুনে।
“কী বললি? বুঝতে পারলাম না… ”
“আমাকে একটু আদর করবি? আমার গালে কিংবা আমার ঠোঁটে কিংবা তোর যেখানে মন চায়?” কাপা কাপা কণ্ঠে কথাগুলো আওড়ায়।
আমি স্তব্ধ হয়ে ওর কথা শুনি। একটা মেয়ে কোনোদিন আমাকে এমন করে বলেনি। কী আজব কথা! আমি একটা মেয়েকে স্পর্শ করবো? তার ঠোঁটে আদর করবো?
মনের অজান্তেই আমার শরীর কেঁপে উঠলো।
শোয়া থেকে আধশোয়া হয়ে বসলাম দেয়ালে পীঠ ঠেকিয়ে। মোবাইলটা ভালো করে কানে লাগাতে গিয়ে দেখি আমার হাত কাঁপছে। বোধহয় শরীরের তাপমাত্রাও বেড়ে গিয়ে থাকবে।
চেষ্টা করলাম নিজেকে সংযত করতে। বললাম, “কী সব হাবিজাবি বলছিস লু? বুঝতে পারছিস কী বলছিস?”
আমার ঠাণ্ডা কণ্ঠস্বর শুনে ও চুপ করে গেলো। একটু পর শ্বাসের শব্দ শুনে বুঝলাম ও কাঁদছে।
মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। বুঝতে পারলাম ওর কোনো সমস্যা হয়েছে।
নতুন করে ওর সাথে যোগাযোগ হওয়ার পরের কথা এগুলো।

ছয়.

শান্ত হওয়ার জন্য ওকে একটু সময় দিলাম। একটু পর ও শান্ত হলো, বুঝতে পারলাম ওর কথা শুনেই।
“কী করছিস তুই?”
“কী হয়েছে তোর?” উল্টো প্রশ্ন করি আমি।
“কিছু না, কিছু মনে করিস না। মনটা ভীষণ খারাপ, ভীষণ খারাপ।” লুবনা আমাকে জানায়।
“লু, প্রতিটা মানুষের মনে কিছু একান্ত কথা থাকে। এগুলো কাউকে না কাউকে বলতেই হয়। কারও সাথে শেয়ার করতেই হয়। এই কেউ একজনটা হতে পারে বাবা কিংবা মা, ভাই-বোন, স্ত্রী বা স্বামী অথবা কোনো বন্ধু। তোর মনের কথাগুলো কাউকে বলে ফেল, দেখবি মনটা অনেক ভালো হয়ে গেছে।” বললাম ওকে।
“জ্ঞান দিবি না। কাল তোর সাথে দেখা করতে চাই।” স্ট্রেইট আমাকে জানিয়ে দিলো।
“তোর সাথে দেখা করবো? লোকজন আমাকে ক্ষেপাবে একটা বান্দরনীর সাথে ঘুরছি বলে।” হেসে বললাম ওকে।
“বেশি কথা বলবি না। কাল সকালে তোকে ফোন করবো। এখন ঘুমো। রাখি?”
“মাঝ রাতে ঘুম ভাঙিয়ে এখন বলে ঘুমো।” আমি রাগ দেখানোর চেষ্টা করি। “তুই পেয়েছিসটা কী?”
“আয় তোকে ঘুম পাড়িয়ে দিই।”
“কোথায় আসবো?” আমি অবাক হই।
“আরে গাধা, মনে মনে ভাব তোর মাথায় আমি হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।” শিক্ষয়ত্রীর মতো করে বলে ও।

আমি আবারও শিহরিত হই।

সাত.

পরদিন ওর কলের অপেক্ষা করি। ওর মোবাইল বন্ধ। আমার টেনশান বাড়ে। একটা টিউটোরিয়াল ছিলো। কিন্তু মন চাইলো না। যদিও আগেই জানতাম ও আমার সাথে দেখা করবে না, কেননা ও আগেও এরকম কয়েকবার বলেছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর দেখা করেনি। তাই এ ব্যাপারে আমি আর খুব একটা আগ্রহ দেখাই না।

আট.

চার পাঁচ দিন পর ওর কল পেলাম।
“রাগ করছিলি?”
“না, রাগ করবো কেন?” আমি রাগ দমন করে শান্ত স্বরে জবাব দেই।
ও হেসে কুটি কুটি হয়।
বলে, “তোকে কিছু কথা বলার জন্য কল করেছি। তুই এখন কোথায় আছিস?”

নয়.

যারা আগ্রহ নিয়ে এতোখানি লেখা পড়েছেন, তাদেরকে সবিনয়ে জানাচ্ছি, তারপরের কাহিনী খুবই সংক্ষিপ্ত।
মূলত এটা কোনো গল্প কিংবা উপন্যাস নয় কিংবা কোনো ছিনেমার কাহিনী। এটা বাস্তবতা।
বাস্তবতা যতো কঠিনই হোক, সে তার পথ থেকে নড়ে না। হৃদয়ের চাওয়অর কাছে বাস্তবতা সবসময়ই পদদলিত হয়। হৃদয় সে তো আকাশের চাঁদ চাইতই পারে কিন্তু বাস্তবতা এটা কখনোই মেনে নেয় না।

যাই হোক, সেদিন লুবনার মনের লুকানো কথাগুলো শুনেছিলাম। কথাগুলো হয়তো ও খুব গুছিয়ে বলেছিলো। কিন্তু আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। স্রষ্টা আমার বুঝার ক্ষমতা অতোটা হয়তো প্রখর করেনি।

দশ.

লুবনা জাহান, আমার প্রিয় লু-এর কথাগুলো বলতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু বাস্তবতা কে কীভাবে নেবেন? আর এটাও আমার পছন্দ না যে, একটা মেয়ে সম্পর্কে সবাই বিরূপ ধারণা নিক।
তাছাড়া একটা মেয়েকে দিয়ে কি আমরা সবাইকে বিচার করতে পারি? না এটা করা ঠিক হবে?

একটা প্রতিকী গল্প লিখেছিলাম লু-এর সাথে যোগাযোগ বন্ধের বছর পাঁচেক পর। এই ব্লগেও গল্পটি পোস্ট করেছিলাম।
।। …..একটি যৌবনবতী ক্ষেতের যৌন কেচ্ছা এবং কবি ও বালিকাদ্বয়…..।।
কেউ জানে না, গল্পটি কোন্ প্রতিকী অর্থে লিখেছিলাম। যারা এই লেখাটি পড়েছেন তারা এবার হয়তো ঐ গল্পটির অর্থ বুঝতে পারবেন।

লুবনার সাথে সেদিনই ছিলো আমার শেষ কথা। ওর কথাগুলো বলার পর ও নিষেধ করেছিলো ও কল না দেয়া পর্যন্ত যেনো ওকে আর কল না দিই কিংবা ওর সাথে আর কোনো যোগাযোগ না রাখি। আমি ওর কথা রেখেছিলাম।
সেদিন গ্রামীণফোন থেকে ও কি আমাকে জেনেশুনেই কল দিয়েছিলো? আমি জানি না।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান